Table of Content

গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসঃ সতর্কতা ও করনীয়

Fatema Noor/ 26 August, 2025

প্রতিটি নারীর জন্য মাতৃত্বের জার্নি হলো একদম নতুন, রোমাঞ্চকর এবং বহুল কাঙ্খিত অনুভূতি। তবে মা হয়ে ওঠার এই যাত্রাটি একেবারেই সহজ নয়। এই সময়টি একজন মাকে যথেষ্ট সতর্কতার সাথে পার করতে হয়।

মা হয়ে উঠার এই পুরো জার্নিতে শারীরিক ও মানসিকভাবে নিজেকে তৈরির করে নেয়ার প্রস্তুতি চলে, তাই নিরাপদ গর্ভাবস্থা ও গর্ভস্থ ভ্রুনের স্বাস্থ্য ও সঠিক ডেভেলপমেন্ট নিশ্চিত করতে এই সময় একজন মাকে নিয়মিতভাবে একজন গাইনোকলোজিস্ট এর তদারকিতে থাকা ও তার নির্দেশ অনুযায়ী জীবনযাপনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা খুবই জরুরী। ।

জানুন বিস্তারিত

গর্ভাবস্থা বা প্রেগন্যান্সির প্রাথমিক লক্ষণ হচ্ছে একজন মেয়ের নিয়মিত সার্কেলের মাসিক বন্ধ হওয়া। সময় পার হওয়ার পরও যদি মাসিক শুরু না হয় তখন Pregnancy Test এর মাধ্যমে গর্ভাবস্থা নিশ্চিত হওয়া যায়। এছাড়াও, আরো কিছু শারীরিক লক্ষণ সন্তানের আগমনবার্তাটির জানান দেয়।সচারচর দেখা যায় এমন লক্ষণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য লক্ষণগুলো হলো-

  • শরীরের তরলের পরিমাণ অনেক বেড়ে গিয়ে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
  • স্তনের আকারে ফোলা ফোলা ভাব আসা এবং তুলনামূলকভাবে নরম ভাব অনুভূত হওয়া
  • খুব বেশী ক্লান্ত লাগা ও মাথা ঘুরানো
  • মুড সুইং বা মেজাজের পরিবর্তন
  • এছাড়াও, গ্যাস্ট্রিক ও মাথাব্যথা, পেট ব্যাথা, ক্ষুদামন্দা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি লক্ষণও দেখা দিতে পারে


বিভিন্ন হরমোননের পরিবর্তনের কারণে সাধারণত গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে গর্ভকালীন এ সকল সমস্যায় মায়েরা বেশী ভোগেন।



গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসকে বলা হয় ফার্স্ট ট্রাইমেস্টার । এই সময়টি একজন গর্ভাবতী মায়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই তিন মাসে একজন হবু মা নতুন নতুন অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির সম্মুখীন হন। এই সময় মায়ের স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন দেখা দেয়। । অনেকক্ষেত্রে খাবারে প্রতি চরম অনীহা এবং অরুচি দেখা দেয়। অথচ এই সময়েই গর্ভস্থ শিশুর পুষ্টির জন্য তাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত পুষ্টি খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হয়। । এই সময় অনেক মায়েদের বমি এবং বমি বমি ভাব থাকে। এছাড়াও অনেকে এই সময়ে কষা পায়খানা বা কোষ্ঠকাঠিইন্যে ভুগে থাকেন।গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসের সাধারণ সতর্কতা, যা গর্ভবতী মায়ের জানা জরুরি-

  • বাইরের যে কোনো আঘাতে থেকে গর্ভাস্থ শিশুকে সুরক্ষিত রাখতে চলা-ফেরা ও ওঠা-বসায় সতর্ক হতে হবে।
  • প্রথম তিন মাসের মধ্যে অন্তত একটি আল্ট্রাসাউন্ড সম্পন্ন করতে হবে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা ও সঠিক ওজন বজায় রাখতে হবে।
  • পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে।
  • নিয়মিত ভাবে শরীরে সকালের রোদ লাগাতে হবে।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে।
  • সাবধানে চলাফেরা করতে হবে।


প্রথম তিন মাসে গর্ভবতী মাকে যে সব জিনিস বর্জন করতে হবে-

  • দুশ্চিন্তা ও ভারী কাজ ও দীর্ঘ ভ্রমণ বর্জন করতে হবে।
  • মায়ের মোবাইল আসক্তি এবং স্ক্রীন টাইম কমাতে হবে।
  • বিরক্তির কারণ হয় এমন পরিবেশ ও কাজকর্ম এড়িয়ে চলতে হবে।
  • ধূমপান ও ধূমপায়ী ব্যক্তি থেকে দূরে থাকতে হবে।
  • কফি, কোমল পানীয় বা সফট ড্রিংক পান কমিয়ে ফেলতে হবে।

প্রথম ট্রাইমেষ্টার গাইডলাইন

একজন মা সর্বপ্রথম একজন ভালো গাইনোকলোজিস্ট এবং একটি ভালো হাসপাতাল খুজে বের করবেন। শিশুর বিকাশ ও বৃদ্ধির ব্যাপারে সঠিক জ্ঞান লাভ করার জন্য বই এবং ইন্টারনেটের সাহায্য নিবেন। প্রতিটি পদক্ষেপ সৃষ্টিকর্তার উপর নির্ভরশীলতা তার মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে।

শারীরিক ও মানসিক অসুবিধা হলে অবশ্যই দ্রুত সময়ের মধ্যে ডাক্তারকে অবগত করতে হবে। মা’কে যতোটা সম্ভব হাসিখুশি ও দুশ্চিন্তামুক্ত থাককে হবে। পরিবার ও প্রিয়জনদের সাথে ভালো সময় কাটানোর মাধ্যমে নিজেকে উৎফুল্ল থাকতে হবে।

F.A.Q

১. গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে কী কী করা উচিৎ?

যেকোন মায়ের ই উচিৎ পরিবারের সাথে আলোচনা করে ডাক্তার নির্বাচন করা। স্বামী এবং পরিবারের সাহায্য নিয়ে নিয়মিত চেকাপ এর ভেতর থাকা।

২. গর্ভাবস্থার শুরুতে কী সাবধানতা দরকার?

ভারী কোনো ব্যায়াম না করা। কাঁচা বা অর্ধসিদ্ধ খাবার একেবারেই না খাওয়া। পরিমিত পরিমাণে ভিটামিন এ খাওয়া।

৩. প্রথম তিন মাসে কী খাবেন, কী খাবেন না?

চা, কফি পরিমিত পান করতে হবে। এলার্জি জাতীয় খাবার খাওয়া যাবেনা। নোংরা, অপরিষ্কার পানি, ভাজাপোড়া খাওয়া পরিহার করতে হবে। সাদা ভাত, আটার পরিবর্তে লাল চাল, লাল আটা, বাদামি চিনি খেতে হবে।

৪. কোন লক্ষণগুলো ডাক্তার দেখাতে হবে?

অতিরিক্ত রক্তপাত ও পেট ব্যাথা বা মাথা ব্যাথা, রঙিন গন্ধযুক্ত ডিসচার্জ, তিন দিনের বেশি জ্বর, অতিরিক্ত বমি হলে বা মাসিকের ব্যাথার মতো তীব্র ব্যাথায় অজ্ঞান হয়ে গেলে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে।

৫. ওষুধের বিষয়ে কি কি সতর্কতা রাখতে হবে?

প্রেগনেন্সির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একজন মা কখনোই কোনো আনপ্রেস্ক্রাইব্ড ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না। শারীরিক দুর্বলতা এ সময় খুব সাধারণ কিন্তু একজন মা কে সবসময় মানসিক ভাবে দৃঢ় থাকতে হবে তার ও অনাগত শিশুর স্বাস্থ্য বিবেচনা করে।